সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ !

গত বৎসর জলবায়ু সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক খবর শুনা গিয়াছিল। শিল্পকারখানার দরুন বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইলেও উদ্ভিদ জগতের নাকি উপকার হইয়াছে। ওই বর্ধিত কার্বন ডাইঅক্সাইড নাকি উদ্ভিদের জন্য সারের কাজ করিয়াছে। সালোকসংশ্লেষের জন্য কার্বন ডাইঅক্সাইড অপরিহার্য। অতএব, পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়িলে উদ্ভিদের উপকার হইবারই কথা। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী কৃত্রিম উপগ্রহে সংগৃহীত চিত্রে দেখা গিয়াছিল, এই গ্রহে সবুজায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাইয়াছে। এমনকি কোনও কোনও সমীক্ষায় এমনতর তথ্যও প্রকাশিত যে, সবুজায়নের এই মাত্রা নির্দেশ করিতেছে, পৃথিবীতে মোট কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদনের ২৫ শতাংশ বৃক্ষাদি শুষিয়া লইতেছে। উক্ত পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড চিন দেশে বিভিন্ন কলকারখানা হইতে নিঃসৃত। চিন দেশটি কার্বন-উদ্গিরণকারী রাষ্ট্রের তালিকায় শীর্ষস্থানে। যদিও সালোকসংশ্লেষই উদ্ভিদের বাড়িয়া উঠিবার একমাত্র উপকরণ নহে— নাইট্রোজেন-ঘটিত সারও উদ্ভিদের জীবনধারণে কাজে লাগে— তবুও ওই সংবাদ পরিবেশবাদীদের মনে সুখসঞ্চার করিয়াছিল। কার্বন ডাইঅক্সাইডের ক্রমবর্ধমান পরিমাণ যে সদাই দুঃখের নহে, তাহা যে সুখের খবরও দেয়, তাহা জানিয়া আশ্বস্ত হওয়া গিয়াছিল। যে সব বিজ্ঞানী পরিবেশের বিপদ মানেন না, বিশ্ববাসীকে অহেতুক ভীতসন্ত্রস্ত হইতে নিষেধ করেন, তাঁহারা উৎফুল্ল হইয়াছিলেন। দেখা গেল, সেই স্বস্তি সাময়িক। আগামী দশকে এই গ্রহের উষ্ণতা প্রাক্-শিল্প বিপ্লবের তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়িবে, জানাইয়াছে ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। সংস্থাটি এই ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশ করিয়া বলিয়াছে, আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষের নির্বিচার জ্বালানি খরচের ফলে উক্ত বিপদ ঘনাইতেছে। বিপদ ইদানীং বাড়িয়াছে, কারণ এখন শিল্প উৎপাদনের হার পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার সহিত তাল মিলাইতে গিয়া বাড়াইতে হইয়াছে। দুই শত জনের অধিক বিজ্ঞানী কয়েক বৎসর ব্যাপী গবেষণান্তে আইপিসিসি-র ওই রিপোর্ট তৈরি করিয়াছেন। সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে ১৯৫টি রাষ্ট্র সিলমোহর দিবার পর প্রকাশ করা হইয়াছে ওই রিপোর্ট। ১৯৯০ সাল হইতে জলবায়ু পরিবর্তনের যে সমীক্ষা বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীগণ চালাইতেছেন, ওই রিপোর্ট তাহার অন্তর্গত। আগামী তিন মাসের মধ্যে গ্লাসগোয় জলবায়ু বিষয়ে যে বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইবে, তাহার পূর্বে আরও দুইটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশিত হইবে। অধুনা প্রকাশিত রিপোর্টের উপসংহার: পৃথিবী এত উত্তপ্ত যে, বিগত এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বৎসরে তাহা দেখা যায় নাই। কানাডার জলবায়ু বিজ্ঞানী জিউবিন ঝাং বলিয়াছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন যে ভয়ঙ্কর মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে, তাহার প্রমাণ সর্বত্র। এখনই পদক্ষেপ না করিলে ভবিষ্যতে চরম জলবায়ু-জনিত উপদ্রবের কবলে পড়িবে এই গ্রহ। আমরা এক-এক সময়ে এক-এক বিপদের মুখে পড়িব না, বিভিন্ন বিপদ একই সময়ে আসিবে। নয়া দিল্লিস্থ ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের প্রধান উষা কেলকর বলিয়াছেন, আইপিসিসি বিগত তিন দশক ধরিয়া লাগাতার ভাবে ভবিষ্যতের ভয়াল ছবি তুলিয়া ধরা সত্ত্বেও বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়িতেছে, ইহা পরিতাপের বিষয়। আইপিসিসি-র বর্তমান রিপোর্টের অভিঘাতে ভারতীয়েরা দেশে হিট ওয়েভের কবলে পড়িবেন, তাহা নিশ্চিত। বঙ্গোপসাগরে জলতলের উচ্চতাবৃদ্ধিহেতু অনেক দ্বীপ নিশ্চিহ্ন হইবে, এবং জলবায়ু-উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বাড়িবে, তাহাও এক প্রকার নিশ্চিত। বিপদকালে বুদ্ধিনাশ মানুষের ধর্ম। অথচ, সঙ্কটে সংযত আচরণই শ্রেয়। কোভিড-১৯ দেখাইয়া দিয়াছে, রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে বিবাদ অহেতুক। বিপদ একটি রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে না, সব রাষ্ট্রকে একই ভাবে করে। জলবায়ু-জনিত বিপদও শিক্ষা দিয়াছে যে, সঙ্কট কোনও দেশের একার নহে, তাহা সকলের। উগ্র জাতীয়তাবাদ আমাদের মানিতে না দিলেও, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। ইহাই পরম সত্য। কারণ, জলবায়ু একটি বিষম বস্তু। ইহার মধ্যে প্রজাপতি প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। মেদিনীপুরে প্রজাপতি ডানা ঝাপ্টাইলেও, মোগাদিসুতে ঝড় উঠিতে পারে। সুতরাং, জলবায়ুর বিপদকে স্বল্প করিয়া দেখা উচিত নহে। জলবায়ুবিশারদরা যে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছেন, তাহা মাথায় রাখা কর্তব্য। সব রাষ্ট্র মিলিয়া পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। বাতাসে যাহাতে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ না বাড়ে, তাহা দেখা উচিত। নচেৎ, কোনও এক রাষ্ট্রের নহে, সমগ্র পৃথিবীরই বিপদ। শহরের তথ্যপ্রযুক্তি পাড়ার প্রস্তাব, সপ্তাহে একটা দিন হোক ‘নো ফোন ডে’। জরুরি কারণ ছাড়া মোবাইল ব্যবহার নাস্তি। মানে ধরেই নেওয়া হচ্ছে স্মার্টফোনে হাতটুকু পড়বে না এমন দিন অসম্ভব, তাই ‘ইতি গজ’-র মতো কম ব্যবহারের আর্জি। জনগণ কি এমন দিন মেনে নিতেন? অডিয়ো-ভিডিয়ো কল-কলানি, হোয়াটসঅ্যাপ ফরোয়ার্ড, ফেসবুকের চণ্ডীমণ্ডপরহিত সুখহীন নিশিদিন ফোনহীন এ জীবন নিয়ে অনর্থ ঘটতই। স্মার্টফোনে মুখ গোঁজা বলেই না কতশত সংসারে এখনও শান্তিকল্যাণ!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

COVID-19: মারণক্ষমতা হারাচ্ছে করোনাভাইরাস, দাবি অক্সফোর্ড। জেনে নিন....

জিনগত পরিব্যক্তির কারণে করোনাভাইরাস ক্রমশই মারণক্ষমতা হারাচ্ছে। এমনটাই দাবি টিকা নির্মাতা সংস্থা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষক ডেম সারা গিলবার্টের। তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের নয়া প্রজাতিগুলির প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার ক্ষমতা অনেকটাই কম।’’ আগামী দিনেও করোনাভাইরাসের ‘দুর্বল’ হওয়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেছেন ডেম। ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণাগার ‘জেনার ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান ডেম বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত এটি সাধারণ জ্বরের (ফ্লু) ভাইরাসের স্তরেই চলে আসবে।’’ বৃহস্পতিবার ‘রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিন’-এর আলোচনাসভায় তাঁদের গবেষণার কথা জানিয়ে ডেম বলেছেন, ‘‘জিনের পরিব্যক্তির কারণে ভবিষ্যতে আরও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় নেই।’’ ডেম জানিয়েছেন, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতা কমতে থাকে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তবে ‘নির্বিষ’ হয়ে পড়লেও ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা কমার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেক...

চলো একটু ঘুড়ে আসি কাঞ্চনজঙ্ঘা বর্ননা ।

তাপসী ভূত বিশ্বাস করে না ঠিকই, কিন্তু সেটা খাস কলকাতায় বসে। এখন উত্তর সিকিমের এই প্রত্যন্ত গ্রাম— একে গ্রাম বলাও ভুল হবে, পাহাড়তলির ওপর ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা কয়েকটা কাঠের বাড়ি— যেখানে সাঁঝবেলাতেই নিঝুম রাত নেমে এসেছে, এখানে ওর কেমন একটা ভয়-ভয় করছে। তার ওপর বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। এই অঞ্চলে এই একটাই হোম-স্টে সদ্য খুলেছে। সাকুল্যে চারটি ঘর। এখন এই ভরা বর্ষায় কেউ আসে না সাধারণত। যদি হঠাৎ রঞ্জনের অ্যাডভোকেট বন্ধু তমালের ফোন না পেত, তা হলে তাপসীও আসত না। অফিসে একটা জরুরি মিটিং চলছিল, তখনই আসে ফোনটা। মিটিং চলাকালীন খুব জরুরি না হলে ও কোনও ব্যক্তিগত ফোন ধরে না, তাই ‘মিটিংয়ে আছি, পরে ফোন করছি’ মেসেজ দিয়ে কেটে দিয়েছিল। পরে ফোন করতে তমাল কোনও ভণিতা না করে ওকে জানায় যে, রঞ্জন এখন অফিসের ট্যুরে দিল্লিতে নেই, মণিকার সঙ্গে গোয়ায় ছুটি কাটাতে গেছে। ওরা ফিরে এসে বিয়ে করতে চায়। তমালকে দায়িত্ব দিয়ে গেছে ডিভোর্সের শর্তাবলি তাপসীর সঙ্গে ফাইনাল করে রাখতে। রঞ্জন উদার ভাবে বলেছে, তাপসীর সব ন্যায্য দাবি ও মেনে নেবে, প্রকৃত ভদ্রলোকের মতো। তমাল কথা বলছিল পারিবারিক বন্ধু হিসেবে নয়, এক জন ল’ইয়ার হিসেবে। এতই ...

শরীরে জল জমেছে? সুস্থ থাকতে কী করবেন জেনে নিন....

নিয়ম করে স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়াদাওয়া-শরীরচর্চা সবই করেন, অথচ ওজন কমছে না কিছুতেই। কেন ভেবে পাচ্ছেন না! শরীরে জল জমছে না তো? এমনিতেই মানবদেহের ৫০-৬০ শতাংশ জল থাকে, কিন্তু যদি দেহে জলের পরিমাণ তার চেয়েও বেড়ে যায়? ফলে হাত-পা-গোড়ালি ফুলে যেতে শুরু করে। ব্যথাও হতে পারে। এই সমস্যা প্রায়শই হতে থাকলে ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস, ফুসফুসে জল জমার মতো জটিল রোগও দেখা দিতে পারে। কেন দেহে জল জমে? অনেক ক্ষণ একজায়গায় বসে আছেন? তার কারণে শরীরে জল জমতে পারে। ঠিক একই রকম ভাবে এক জায়গায় অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা ইত্যাদির কারণেও দেহে জল জমতে পারে। তবে এই সব কারণ ছাড়াই যদি বারবার শরীরে জল জমে তা হলে একবার হৃদ্‌যন্ত্র পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। ফুসফুস বা কিডনিতে কোনও জটিল রোগ বাসা বেঁধে থাকলে, তার উপসর্গ হিসেবেও দেহে জল জমতে পারে। কী করবেন? ১) খাবারে নুনের পরিমাণ কমান। চিপস, নিমকি, বড়া, সিঙ্গাড়া ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করুন। পাস্তা, পিৎজা, বার্গার, আইসক্রিম খাওয়াও চলবে না। ২) পাতে রাখুন টমেটো, কলা, অ্যাভোক্যাডো, শসা, বাঁধাকপি, পার্সলে পাতা ও পালং শাক। এছাড়া চিকিৎসকের...