নাক ও গলায় কেমন প্রভাব ফেলছে সার্স কোভ-২, তা দেখে বোঝা যায় সংক্রমণের তীব্রতা। করোনা রোগীদের নিয়মিত দেখে, এমনই ধারণা তৈরি হয়েছে গবেষকদের একাংশের।
অন্যান্য করোনাভাইরাসের মতো সার্স কোভ-২ সংক্রমণ ছড়ায় নাক-গলার মাধ্যমেই। শ্বাসনালীতে ঢুকে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের নানা অংশে। তার জেরে কারও নাক-গলা-শ্বাসনালীতেই সংক্রমণের প্রভাব বেশি থাকে। কারও আবার তা ছড়িয়ে পড়ে ফুসফুসে। কারও ক্ষেত্রে সংক্রমণের প্রভাব বেশি পড়ে, কারও আবার কম। কেন এমন হয়, তা এখনও স্পষ্ট ভাবে বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই।
সম্প্রতি ‘সেল’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে। কোন ধরনের কোষে প্রথম সার্স কোভ-২ আক্রমণ করে এবং শ্বাসযন্ত্রে কী ভাবে তা প্রভাব ফেলে, তা দেখার চেষ্টা করেন গবেষকরা। সেখানেই তাঁরা লক্ষ্য করেছেন, নাক ও গলার কোষে প্রতিরোধশক্তি কম থাকলে দ্রুত ছড়ায় এই ভাইরাস।
বস্টন চিল্ড্রেন্স হাসপাতাল এবং মিসিসিপ্পি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার যৌথ ভাবে এই গবেষণা করে। হাল্কা থেকে তীব্র সংক্রমণ, বিভিন্ন ধরনের রোগীদের পরীক্ষা করেন গবেষকেরা। হোসে অর্ডোভাস মন্তানেস নামে এক গবেষক বলেন, ‘‘অনেকে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করেন, কেন কেউ বেশি অসুস্থ হন। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার দ্বারা বোধ হয় এই বিষয়টি বোঝা সম্ভব নয়।’’
তাঁর বক্তব্য, একই ভাইরাল লোড থাকলেও অসুস্থতার মাত্রা আলাদা হতে পারে। প্রথমেই নাক-গলার কোষ যদি প্রতিরোধ করতে শুরু করে, তবে সেই রোগীর ক্ষেত্রে অসুখের তীব্রতা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফলে গবেষকদের বক্তব্য, ভাইরাসের প্রবেশপথের কোষে প্রতিরোধশক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কী ভাবে তা করা যায়, তা জানতে পারলে সংক্রমণের তীব্রতা কমানো সহজ হবে।
জিনগত পরিব্যক্তির কারণে করোনাভাইরাস ক্রমশই মারণক্ষমতা হারাচ্ছে। এমনটাই দাবি টিকা নির্মাতা সংস্থা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষক ডেম সারা গিলবার্টের। তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের নয়া প্রজাতিগুলির প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার ক্ষমতা অনেকটাই কম।’’ আগামী দিনেও করোনাভাইরাসের ‘দুর্বল’ হওয়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেছেন ডেম। ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণাগার ‘জেনার ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান ডেম বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত এটি সাধারণ জ্বরের (ফ্লু) ভাইরাসের স্তরেই চলে আসবে।’’ বৃহস্পতিবার ‘রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিন’-এর আলোচনাসভায় তাঁদের গবেষণার কথা জানিয়ে ডেম বলেছেন, ‘‘জিনের পরিব্যক্তির কারণে ভবিষ্যতে আরও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় নেই।’’ ডেম জানিয়েছেন, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতা কমতে থাকে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তবে ‘নির্বিষ’ হয়ে পড়লেও ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা কমার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেক...

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন