বিভিন্ন প্রাণী জানে। মানুষ ভুলে যায়। কিন্তু মনে রাখা জরুরি যে মায়ের দুধই শিশুর আসল খাদ্য। জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস স্তন্যপানের কোনও বিকল্প হয় না।
সদ্যোজাতকে মায়ের দুধ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতি বছর ১ -৭ অগস্ট পালন করা হয় ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’। অতিমারির সময়ে সে বিষয়ে কি আরও সচেতন হতে হবে আমাদের? কোভিডের তৃতীয় ঢেউ থেকে সদ্যোজাতকে কী ভাবে রক্ষা করতে পারে মায়ের দুধ, তা জানালেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক বাসুদেব মুখোপাধ্যায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে স্তন্যপান করালে ভবিষ্যতে নানা অসুখ থেকে তাকে দূরে রাখা যায়। জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে স্তন্যপান করানো উচিত কোলোস্ট্রামের জন্যে।
প্রশ্ন: কোলোস্ট্রাম ঠিক কতটা পুষ্টিকর?
উত্তর: সন্তানের জন্মের পরে প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই মায়ের স্তনবৃন্ত থেকে ঈষৎ হলদেটে ঘন দুধ নিঃসৃত হয়। এই দুধকেই বলা হয় কোলস্ট্রাম। কোলোস্ট্রামে আছে IgA নামক এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি যা সদ্যোজাতর মুখ, গলা, থেকে শুরু করে ফুসফুস ও অন্ত্র প্রতিটি অঙ্গের রক্ষাকারী আবরণ মিউকাস মেমব্রেনের সুরক্ষা কবচ। মিউকাস স্তর সুরক্ষিত থাকলে বাইরের সংক্রমণ চট করে শিশুকে কাবু করতে পারে না।
প্রশ্ন: কিন্তু প্রসবের প্রায় সঙ্গেসঙ্গে মা কি দুধ খাওয়ানোর মতো সুস্থ থাকেন?
উত্তর: সদ্যোজাতকে দুধ খাওয়ানো খুব কষ্টকর কাজ নয়। তাই প্রসূতির যতই শারীরিক কষ্ট থাকুক না কেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে কোলোস্ট্রাম দেওয়া জরুরি। বিশেষ করে যে সব শিশু নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মেছে, তাদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। জন্মের সঙ্গেসঙ্গে কোলোস্ট্রাম খাওয়ালে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রশ্ন: এই দুধের পরিমাণ তো অত্যন্ত কম? তাতে কি শিশুর পেট ভরে?
উত্তর: ম্যামারি গ্ল্যান্ডে জমে থাকা ঘন কোলোস্ট্রাম স্বাভাবিক মাতৃদুগ্ধের থেকে প্রায় ১০ গুণ ঘন। প্রসবের পর মোটে ২–৩ দিন এই দুধ নিঃসৃত হয়। সত্যিই এর পরিমাণ অত্যন্ত কম, সারা দিনে মাত্র কয়েক চামচ হয়। তবে তা নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। সদ্যোজাতর পাকস্থলির আকার একটি মার্বেলের গুলির মতো। (যদিও প্রতি মুহূর্তে পাকস্থলী আকারে বাড়ে) তাই প্রথম দু’-তিন দিন যৎসামান্য দুধেই তার পেট ভরে যায়। তাই সব সময়ে পরামর্শ দেওয়া হয় শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য কোলোস্ট্রাম দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: এত কম খেলে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি হয় না?
উত্তর: না। পুষ্টিবিদরা এই দুধকে বলেন তরল সোনা। প্রথম দুধে আছে এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান যা শিশুকে দিলে তার জীবনভর সুরক্ষা প্রায় সুনিশ্চিত। সদ্য মায়ের প্রথম দুধ কোলোস্ট্রাম গ্রোথ ফ্যাক্টরে পরিপূর্ন। এটি শিশুর ত্বক, পেশি, কার্টিলেজ, নার্ভ টিস্যু ও হাড় গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা নেয়।
প্রশ্ন: শিশুমৃত্যু আটকাতে মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ কী?
উত্তর: উন্নয়নশীল দেশে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে বহু শিশুর মৃত্যু হয়। কোলোস্ট্রাম খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করা যায়। এই কারনেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাকশন জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপর জোর দিচ্ছেন। প্রোটিন রিচ পলিপেপটাইড বা পিআরপিএস সমৃদ্ধ কোলোস্ট্রাম নিয়ে গবেষণা করে জানা গিয়েছে ইকোলাই, রোটা ভাইরাস, সিগেলার মতো মারাত্মক সংক্রমণের হাত থেকে এটি আজীবন সুরক্ষা দিতে পারে।
জিনগত পরিব্যক্তির কারণে করোনাভাইরাস ক্রমশই মারণক্ষমতা হারাচ্ছে। এমনটাই দাবি টিকা নির্মাতা সংস্থা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষক ডেম সারা গিলবার্টের। তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের নয়া প্রজাতিগুলির প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার ক্ষমতা অনেকটাই কম।’’ আগামী দিনেও করোনাভাইরাসের ‘দুর্বল’ হওয়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেছেন ডেম। ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণাগার ‘জেনার ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান ডেম বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত এটি সাধারণ জ্বরের (ফ্লু) ভাইরাসের স্তরেই চলে আসবে।’’ বৃহস্পতিবার ‘রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিন’-এর আলোচনাসভায় তাঁদের গবেষণার কথা জানিয়ে ডেম বলেছেন, ‘‘জিনের পরিব্যক্তির কারণে ভবিষ্যতে আরও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় নেই।’’ ডেম জানিয়েছেন, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতা কমতে থাকে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তবে ‘নির্বিষ’ হয়ে পড়লেও ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা কমার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেক...


মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন